ফারুক হোসেন রাজ, স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা:
ময়লা ও ছেঁড়া টি-শার্ট, পরনে ছেঁড়া হাফ প্যান্ট, পায়ে জুতা নেই। মাথার চুলগুলো রুক্ষ, শরীরে দীর্ঘদিনের ক্লান্তির ছাপ। তাকে দেখলে প্রথমেই বুঝা যায়, জীবন ও জীবিকার চাপে কেমন অসহায়ভাবে বড় হচ্ছে সে। নাম তার আরাফাত হোসেন, বয়স মাত্র ১০। বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার কেরেলকাতা ইউনিয়নে। অসুস্থ বাবা কামরুল ইসলাম ও তার মা দিন পার করেন ভিক্ষা করে। ছোট বোনটি আরেকটি মুখ, যার জন্য কিছুই করার সামর্থ্য নেই পরিবারের।
কলারোয়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি মেলা ২০২৫ এর মেলায় হঠাৎ করেই আরাফাত সামনে চলে আসে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের। শত শত পরিপাটি পোশাকে ঘেরা ভিড়ে ছেঁড়া জামা-প্যান্টে আরাফাত যেন কষ্টের এক প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। আরাফাতের মুখে তখন একটাই কথা—
"সবার তো ঈদের মার্কেট হচ্ছে, নতুন জামা কিনছে, কিন্তু আমাদের নতুন জামা কেনার মতো টাকা নেই।"
এই অবাক-করা কথাটি শুনে থমকে যান জেলা প্রশাসক। প্রশাসনিক নানা ব্যস্ততার ভিড়ে এই একটি প্রশ্ন যেন তার হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়। চোখ পড়ে ছেলেটির পায়ে— জুতা নেই, পোশাক নোংরা। এটাই কি একটি শিশুর প্রাপ্য?
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ সাথে সাথেই মানবিক সিদ্ধান্ত নেন। কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহুরুল ইসলামকে নির্দেশ দেন আরাফাতের জন্য নতুন জামা-প্যান্ট ও দুই জোড়া জুতা সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিতে। দ্রুত সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়। হাতে যখন নতুন জামা, পায়ে নতুন জুতা— তখন আরাফাতের মুখে দেখা যায় বহুদিন পর প্রাণখোলা হাসি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান,
“সকল আরাফাতদের মুখে যদি আমরা এভাবে হাসি ফোটাতে পারি, তাহলে আমাদের কাজ সফল হবে। সমাজে এমন অনেক আরাফাত আছে, যারা আজও ভালোবাসার স্পর্শ পায় না। আমরা চাই সকল আরাফাতই ভালো থাকুক সবার পাশে থাকা চাই, আসুন আমরা একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিই প্রতিবেশীদের খবর নিই”
জেলা প্রশাসকও বলেন,
“শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা শুধু সহানুভূতির নয়, ভালোবাসা ও অধিকার নিয়ে বাঁচার যোগ্য। প্রশাসন সর্বদা এই শিশুদের পাশে থাকবে।”
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়— আমাদের আশপাশেই হয়তো এমন অনেক আরাফাত আছে, যাদের মুখে ঈদের হাসি নেই, নতুন জামার গন্ধ নেই, পায়ে জুতাও নেই। সমাজের সামর্থ্যবানরা যদি একটু হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে হাজারো শিশুর জীবন বদলে যেতে পারে।
আপনি, আমি, আমরা সবাই যেন নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী আশেপাশের আরাফাতদের খোঁজ নেই। পাশে দাঁড়াই সেই মায়েদের, যারা সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে আজও পায়ে হেঁটে ভিক্ষা করেন। ভালোবাসাই পারে বদলে দিতে একটি শিশুর জীবন। আসুন, ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিই।