ওয়াজেদ খান ডবলু, কেশবপুর (যশোর): সিডিউল অনুযায়ী ৫ মাসের মধ্যে বুড়িভদ্রা নদীর খনন কাজ শেষ না করে, মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অপেক্ষায় আছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। সরজমিনে দেখা যায়, ১৫/২০% নদী খননের কাজ করার পর, গত তিন মাস নদী খননের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে মৌসুমী বৃষ্টিতে ওই নদীতে দুইফুট পানি জমেছে। নদী পাড়ের মানুষের দাবী, ভরে থাকা নদী খনন না করে এসকেভেটর দিয়ে ২/৩ দিন কোনরকম কাঁদা ঘুলিয়ে যেনতেন ভাবে কাজ শেষ দেখিয়ে, বরাদ্দকৃত টাকার সিংহ ভাগই পকেটস্থ করতে নদী খননে বিলম্বের একমাত্র কারণ।
২০২৫ সালের ফেব্রয়ারী মাস থেকে ওই নদীর খনন কাজ শুরু করে, চলতি জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। তবে এরই মধ্যে বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি নেয়া উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, যশোরের কেশবপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরশনের লক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাইবো) চলতি বছর কেশবপুরের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িভদ্রা নদীর, মঙ্গলকোট ব্রিজ থেকে উজানে চারের মাথা পর্যন্ত, ৪১ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ২.৮ কিলোমিটার (দুই কিলো ৮০ মিটার) নদী খননের জন্য প্রকল্প গ্রহন করে। সিডিউল অনুযায়ী ২০২৫ সালের ফেব্রয়ারী মাস থেকে খনন কাজ শুরু করে একই বছরের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা। কিন্তু ৫মাস শেষ হতে চললেও নামে মাত্র খনন করে। কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই কাজটি করছেন রংপুরের ইউনাইটেড ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সূত্র জানায়, ওই ঠিকাদার নদী খননের কাজটি না করে তিনি ১৫ লাখ টাকায় খনন কাজটি বিক্রি করে দিয়েছেন যশোরের জনৈক জাকারিয়া নামে এক সাফ ঠিকাদারের নিকট। এই ঠিকাদার পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সিডিউল অনুযায়ী নদী খনন না করে, মঙ্গলকোট ব্রিজের মাথার পশ্চিম পাশে ১০০ মিটার. চারের মাথায় ৫০ মিটার এবং এর মাঝ খানে ৩০ মিটার যেনতেন ভাবে এক ফুট গভীর করে এবং ৪/৫ মিটার চৌড়া করে নদী খনন করে, গত ৩মাস যাবৎ খনন কাজ বন্ধ রেখেছেন। এলাকাবাসী বলছেন বর্ষা মৌসুমের আগে নদী খননের কাজ হাতে নেয়া হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব রেওয়াজ মতে দুর্নীতির আশ্রয় নিতে ভরা বর্ষায় মধ্যে নদী খনন করা হয়। সূত্র জানায়, সিডিউল অনুযায়ী সাড়ে ৫ মিটার থেকে ৬ মিটার চৌড়া (টপ) এবং নদীর তলদেশ ৩ মিটার গভীর করে নদী খনন করার কথা। কিন্তু তা-না করে, তারা যেনতেন ভাবে খনন কাজ শেষ করতে চাচ্ছেন। এছাড়া নদী খননের মাটি দুরে ফেলার কথা থাকলেও নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে। কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার জানান, কয়েকদিন মাটিকাটা লেবার মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়। এরপর এসকেভেটর দিয়ে নদী খনন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বর্তমানে টাকা অগ্রিম দিয়েও এসকেভেটর পাওয়া যাচ্ছেনা। গত ১৫জুন ঠিকাদার এই প্রতিনিধিকে জানান, একমাস আগে কেশবপুরের আ.লীগ নেত্রী রেহেনার নিকট থেকে এসকেভেটর ভাড়ানিতে তাকে একলাখ টাকা অগ্রিম দেয়া হলেও তিনি এসকেভেটর দেননি। তাই খনন কাজ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। তাদের দাবী নদী খননের কাজ ইতিমধ্যে ৪০/৪৫% শেষ হয়েছে।
নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, ঠিকাদার এবং পানিউন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সিডিউল অনুযায়ী বুুড়িভদ্রা নদী খনন না করে। বর্ষায় নদী ভরে গেলে কাজ শেষ দেখিয়ে বরাদ্দ কৃত টাকার সিংহ ভাগই পকেটস্থ করবেন।
সাফ ঠিকাদার জাকারিয়া বলেন, সিডিউল অনুযায়ী নদী খনন করা হবে। কিন্তু আ.লীগ নেত্রী রেহেনার কাছ থেকে এসকেভেটর ভাড়া নিতে তাকে গত একমাস আগে ১লাখ টাকা অগ্রিম দেয়া হলেও এখনও (১৬জুন) পর্যন্ত মেশিন পাওয়া যায়নি। ওই টাকা ফেরত নিতে কেশবপুরে এসেছি।
কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীর প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, ৫ মাসের মধ্যে বুড়িভদ্রা নদী খননের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে ৪০/৪৫% কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া এসকেভেটর মেশিন পাওয়া না যাওয়ায় কারনে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, ৫ মাসের মধ্যে বুড়িভদ্রা নদীর খনন কাজ শেষ করার কথা থাকলেও আশানারুপ খনন করা হয়নি। আগামী ১২ দিনের মধ্যে বাকী কণন কাজ শেষ করা যাবেনা। এরজন্য ঠিকাদারকে এই পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।