
স্বপ্নভূমি ডেস্ক: জুলাই আন্দোলনের গণহত্যার বিচার নিয়ে সরকারের আন্তরিকতায় বিন্দুমাত্র সন্দেহ না রাখার আহ্বান জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, “ব্যর্থতা থাকতে পারে, কিন্তু আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো শৈথিল্য নেই।”
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে জুলাই গণহত্যা বিষয়ক আলোচনা সভা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজক ছিল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা অনেক অভিযোগ ও সমালোচনা শুনি। কষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু এটাও ভাবি—এই প্রশ্ন তোলার অধিকার নিশ্চিত করতেই তো আমাদের সন্তানেরা জীবন দিয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে চাই বলেই নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।”
তিনি আত্ম-অনুসন্ধানের ভঙ্গিতে বলেন, “আমি নিজের আত্মাকে প্রশ্ন করি—আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পারব তো, গাফিলতি করিনি? আমি পারব। কারণ জীবনে কখনো এত পরিশ্রম করিনি।”
শহীদ পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি আমি শহীদের বাবা হতাম, আমিও প্রশ্ন করতাম। আপনাদের আবেগ আমরা বুঝি, মেনে নিই।”
বিচার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রথম দিন থেকেই বিচারকাজ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম নিয়মিত আপডেট দিচ্ছেন। বিচারকাজ কখনো কখনো রাত ২টা পর্যন্ত চলেছে। এর চেয়ে দৃশ্যমানতা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়?”
জুলাই গণহত্যায় সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারাও এমন বর্বরতা দেখায়নি। মরদেহ পোড়ানো, আহতদের গুলি করে হত্যা—এসব অপরাধের মাত্রা ইতিহাসে নজিরবিহীন।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৭১-এর ফুটেজেও এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। এসব বর্বরতা মুক্তিযুদ্ধকালীন গল্পেও পাওয়া যায় না।”
শহীদ পরিবারের প্রতি আশ্বাস দিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা হতাশ হবেন না। বিচার প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে, ইনশাআল্লাহ এই সরকারের আমলেই কাঙ্ক্ষিত রায় পাওয়া যাবে। আমরা এমন অকাট্য প্রমাণ রাখছি, যাতে ভবিষ্যতেও কেউ বিচার অস্বীকার করতে না পারে।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের স্বাগত বক্তব্য দেন। এরপর জুলাই আন্দোলনে নিহত এবং মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন যুগ্ম সচিব রুহুল আমীন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম, শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন, শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি আরমান হোসেনসহ অনেকে।
আপনার মতামত লিখুন :