• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Techogram

ডলারের রেকর্ড দরপতন: বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা


FavIcon
সাইফুল্লাহ খালিদ
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 2, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ad728

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মার্কিন ডলারের মূল্য ১০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে, যা ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় দরপতন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের মুদ্রার বিপরীতে এই পতন শুধু মার্কিন অর্থনীতিকেই নাড়িয়ে দিয়েছে না, বরং পুরো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতির পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা ও আগ্রাসী বাণিজ্যনীতি। উচ্চহারে শুল্ক আরোপ, সরকারি ঋণের চাপ এবং মূল্যস্ফীতির শঙ্কা ডলারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে, বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে এবং ভোক্তাদের ব্যয় সংকুচিত হয়েছে।

১৯৭৩ সালে স্বর্ণমান থেকে ডলার বিচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম এত বড় আকারে মার্কিন মুদ্রা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলো। তবে এবার প্রধান কারণ রাজনৈতিক—বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্ব বাণিজ্যনীতির প্রতি অনাস্থা।

ডলারের পতনে বহুমুখী প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দরপতন রপ্তানিকারকদের জন্য কিছুটা স্বস্তি আনলেও আমদানির খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক বাণিজ্য ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজার ও বন্ডবাজারেও এই পতনের প্রভাব পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কাগজে-কলমে ২৪ শতাংশ বেড়েছে, কিন্তু ইউরোর হিসেবে সেই প্রবৃদ্ধি মাত্র ১৫ শতাংশ—অর্থাৎ প্রকৃত মুনাফা অনেকটাই কমে গেছে।

অন্যদিকে, ইউরোপের ইউরোস্টক্স ৬০০ সূচক ডলারে রূপান্তরের পর ২৩ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা দিয়েছে, যার ফলে অনেক মার্কিন পেনশন ফান্ড ও ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান বিদেশি বাজারে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বিশ্লেষক স্টিভ ইংল্যান্ডার বলেন, “ডলার শক্তিশালী না দুর্বল, সেটাই মুখ্য নয়—মূল বিষয় হলো বিশ্ব এই অবস্থানকে কীভাবে দেখছে।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলেও শপথ গ্রহণের পর থেকেই ডলারের দর পতনের ধারা শুরু হয়। বিশেষ করে ২ এপ্রিল ‘স্বাধীনতা দিবস’-এ একতরফাভাবে উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর শেয়ারবাজার, বন্ড ও মুদ্রা বাজারে একযোগে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

ফলে বিদেশি ব্যবসায়ীরা ডলারে লেনদেন কমিয়ে দিয়েছে, সরকারি বন্ডের প্রতি আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে এবং সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ডলারের ‘ব্যতিক্রমী’ অবস্থান এখন প্রশ্নবিদ্ধ

বিশ্লেষকদের মতে, এত দিন ধরে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির কেন্দ্র হিসেবে ডলার যে আস্থার প্রতীক ছিল, তা এখন ভেঙে পড়ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ এবং বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ নীতি বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীদের মনে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আমদানিতে ভাটা পড়েছে, মুদ্রা রূপান্তরের জটিলতা ও আস্থার ঘাটতি একসাথে ডলারকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আর ‘বিশ্ব অর্থনীতির ব্যতিক্রমী শক্তি’ হিসেবে ধরা হচ্ছে না।