
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও নেতৃত্ব সংকট মোকাবেলায় ‘শুদ্ধি অভিযান’-এ নেমেছে। দলীয় হাইকমান্ড বলছে, বিভিন্ন জেলায় দলের নাম ব্যবহার করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন কিছু নেতা-কর্মী। তাদের বিরুদ্ধে চলছে যাচাই-বাছাই ও শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, তথাকথিত ‘হাইব্রিড’, ‘নব্য বিএনপি’ এবং ‘পুশ-ইন’ ঘরানার কিছু ব্যক্তি বর্তমানে তৃণমূল রাজনীতিতে বিভাজন তৈরি করছে। এমনকি কোথাও কোথাও এই কোন্দল রূপ নিয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ হারানো এসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে দল থেকে ছেঁটে ফেলতে চাইছে।
বিশ্বস্ত সূত্র মতে, কেন্দ্রের নির্দেশে ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত কমিটি পুনর্বিন্যাস এবং সদস্য যাচাই শুরু হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ উঠেছে, তাদের তালিকাভুক্ত করে সরাসরি বহিষ্কার, শোকজ কিংবা দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।
দলীয় তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ মাসে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৫,০০০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার এবং আরও ১,০০০ জনকে শোকজ করা হয়েছে। বহুল আলোচিত ঘটনা ঘটে ভোলার তজুমদ্দিন ও লালমনিরহাটের পাটগ্রামে—যেখানে দলীয় কোন্দল সংঘর্ষে রূপ নেয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “দল এবং দেশের স্বার্থে বিএনপি প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিচ্ছে। কেউ যদি দলের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, দখলবাজি কিংবা অপরাধে জড়ায়, তাকে রেহাই দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। ৫ আগস্টের আগের এবং পরের রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এখন দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙলেই শাস্তি নিশ্চিত।”
বিএনপির হাইকমান্ড দাবি করছে, দলের অভ্যন্তরে ঢুকেছে একটি 'সাইলেন্ট গ্রুপ', যাদের নেপথ্যে রয়েছে শাসক দলের মদদ। উদ্দেশ্য—বিএনপির ভিতর থেকেই বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। অভিযোগ আছে, এই চক্রের কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে নিজস্ব লোকজনকে বিএনপিতে ঢোকানোর চেষ্টা করেছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। আমাদের নেতাকর্মীদের বারবার বলা হচ্ছে, যেন তারা আওয়ামী লীগের মত অপকর্ম না করে। তবে প্রকৃত ঘটনাগুলোর চেয়ে অপপ্রচারের মাত্রাও অনেক বেশি।”
দলীয় হাইকমান্ডের ভাষ্য—দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় কেউই ছাড় পাবে না। ‘হাইব্রিড’, ‘পুশ-ইন’ কিংবা ‘নব্য বিএনপি’—নাম যাই হোক, দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙলেই শাস্তি হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলার অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দলের আইনি টিম।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অভিযান বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে, যা আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন :