নড়াইলে নৃশংস হত্যাকাণ্ড: স্ত্রী, মেয়ে ও শাশুড়িকে নির্যাতনের 'প্রতিশোধ'
S Hasan
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 2, 2025 ইং
স্বপ্নভূমি ডেস্ক: নড়াইল সদরে সুদের জালে ফাঁসানো, শারীরিক নির্যাতন এবং পরিবারের একাধিক সদস্যের প্রতি কু-নজর দেওয়ার ‘প্রতিশোধ’ নিতে আকবার ফকির (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন তার প্রতিবেশী বাবু সরদার (৫৯)। শুধু গলা কেটে নয়, নিহতের পুরুষাঙ্গও কেটে ফেলা হয়েছে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রবিউল ইসলাম এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য জানান।
মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তি
গ্রেফতার হওয়া বাবু সরদার নড়াইল সদরের সড়াতলা গ্রামের মৃত মোসলেম সরদারের ছেলে। এসপি জানান, আকবার ফকির হত্যাকাণ্ডের পরপরই জেলা পুলিশের একাধিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও ছায়া তদন্তে নামে। সেই তদন্তের ভিত্তিতেই রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে নড়াইল-লোহাগড়া মহাসড়কে মশাঘূনি ব্র্যাক অফিসের সামনে থেকে বাবু সরদারকে গ্রেফতার করে জেলা ডিবি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবু সরদার হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশ সুপার জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বাবুর স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন, তার শাশুড়িকে ধর্ষণ চেষ্টা এবং কন্যা ও পুত্রবধূর প্রতি ভিকটিম আকবারের কু-নজর—এই নানাবিধ কারণেই বাবু সরদার তাকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
পরিকল্পনা ও নৃশংসতার বিবরণ
পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম আরও জানান, পূর্ব শত্রুতা ও ক্ষোভের জেরে ঘটনার প্রায় ১০ থেকে ১২ দিন আগেই বাবু সরদার আকবার ফকিরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি বাজার থেকে একটি ধারালো চাকু এবং ফার্মেসি থেকে অ্যালার্জির ওষুধ কেনেন।
ঘটনার দিন বাবু সরদার কৌশলে আকবারকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান। সেখানে তিনি পূর্বেই প্রস্তুত রাখা কোমল পানীয় 'স্পীড'-এর সঙ্গে কিনে রাখা ২০টি অ্যালার্জির ট্যাবলেট মিশিয়ে ভিকটিমকে পান করান। কোমল পানীয় পান করে আকবার ফকির অচেতন হয়ে পড়লে, বাবু তার কাছে থাকা গামছা টুকরো টুকরো করে ভিকটিমের হাত ও পা গাছের সাথে শক্ত করে বেঁধে ফেলেন। এরপর ধারালো চাকু দিয়ে ভিকটিমের গলাকেটে হত্যা করেন। নৃশংসতা এখানেই শেষ নয়, তিনি ভিকটিমের অণ্ডকোষ সহ পুরুষাঙ্গ কেটে ঘটনাস্থল সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী ডোবার পানিতে ফেলে দেন।
পুলিশ আরও জানায়, সোমবার দুপুরে বিজ্ঞ আদালতে আকবার ফকির হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন অভিযুক্ত বাবু সরদার।
মরদেহ উদ্ধার
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ৭টায় নড়াইল সদরের বুড়িখালী গ্রামের আজিজুল মৃধার বাড়ির দক্ষিণ পাশের বাঁশবাগানের ভেতরে তালবাগানে ৬০ বছর বয়স্ক আকবার ফকিরের হাত পা বাঁধা, গলাকাটা ও পুরুষাঙ্গ কাটা মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। নিহতের পরিবার প্রথমে হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে না পারলেও, ঘটনার পরদিন নিহতের ছেলে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহত আকবার ফকির ছিলেন সদর উপজেলার সড়াতলা গ্রামের মৃত মোমিন উদ্দিন ফকিরের ছেলে।
আপনার মতামত লিখুন :