• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Techogram

ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পরই পদ ছাড়তে চান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন


FavIcon
শাহরিয়ার সীমান্ত
নিউজ প্রকাশের তারিখ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৮
ছবির ক্যাপশন: ad728

স্বপ্নভূমি ডেস্ক :
'অপমানিত' বোধ করে পদত্যাগে ইচ্ছুক রাষ্ট্রপতি: রয়টার্সকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে মো. সাহাবুদ্দিন

মেয়াদের মাঝপথেই পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরই তিনি দায়িত্ব ছাড়তে চান। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন।

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিজেকে 'অপমানিত' বোধ করছেন।

রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হলেও তার এই পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। ১৭ কোটি ৩০ লাখ মানুষের এই মুসলিমপ্রধান দেশে নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত।

গত বছর আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে নয়াদিল্লিতে পালিয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী তিনিই দেশের সর্বশেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ৭৫ বছর বয়সী মো. সাহাবুদ্দিন পাঁচ বছর মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ঢাকায় সরকারি বাসভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, "আমি চলে যেতে আগ্রহী। আমি চলে যেতে চাই।" দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই কোনও গণমাধ্যমকে দেওয়া তার প্রথম সাক্ষাৎকার বলে রয়টার্সকে জানান তিনি।

তিনি বলেন, "নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি পদের কারণে আমি আমার অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখছি।"

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার 'অপমানিত' বোধ করার পেছনে বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেন:

  • সাক্ষাৎহীনতা: তিনি বলেন, প্রায় সাত মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।
  • প্রেস বিভাগ প্রত্যাহার: রাষ্ট্রপতির প্রেস বিভাগকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
  • প্রতিকৃতি অপসারণ: গত সেপ্টেম্বরে সারা বিশ্বের বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো থেকে রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, "সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতি থাকত। আর এগুলো এক রাতে হঠাৎ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে ভুল বার্তা যায় যে, হয়তো রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেছি।"

তিনি আরও জানান, প্রতিকৃতি অপসারণ নিয়ে তিনি ড. ইউনূসকে চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস-উপদেষ্টারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ২০২৪ সালের আগস্টে হাসিনাবিরোধী বিক্ষোভের সময় সেনাসদস্যদের হস্তক্ষেপ না করায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, তার ক্ষমতা দখলের কোনো ইচ্ছা নেই। বাংলাদেশে সামরিক শাসনের ইতিহাস থাকলেও জেনারেল জামান গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চান।

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন জানান, শুরুতে কিছু আন্দোলনকারী ছাত্র তার পদত্যাগ দাবি করলেও গত কয়েক মাসে কোনো রাজনৈতিক দল তার পদত্যাগ দাবি করেনি।

জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামী পরবর্তী সরকার গঠনে এগিয়ে রয়েছে। এই দল দুটি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা জোটের অংশ ছিল।

২০ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকেই তিনি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই।