• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Techogram

স্বামীকে মেয়ের হত্যাকারী মানতে নারাজ শাহিনুর আক্তার


FavIcon
সাইফুল্লাহ খালিদ
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Sep 20, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ad728


মনিরামপুর প্রতিনিধি : যশোরের মনিরামপুরের রোহিতায় পুকুর থেকে মাহমুদা সিদ্দিকা (১৩) নামে কিশোরী ছাত্রীর বিবস্ত্র লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের বাবাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করেছে থানা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেওয়ার পর আদালত বাবা আইনুল হককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পুলিশ বলছে, বাড়ির পাশের দোকান থেকে রুটি চুরি করার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আইনুল হক নিজেই মেয়েকে রাগবশত গলাটিপে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন। 
এদিকে কিশোরীর মা শাহিনুর আক্তার স্বামীকে মেয়ের হত্যাকারী হিসেবে মানতে নারাজ। তিনি স্বামীর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর)  সকালে সরেজমিন রোহিতায় নিহতের বাড়িতে গেলে শাহিনুর আক্তার বলেন, আমার স্বামী মেয়েকে হত্যা করতে পারে না। আমাদের সাত সন্তানের মধ্যে মাহমুদা বড়। সে তার বাবার খুব আদরের ছিল। তাছাড়া বড় মেয়ের গায়ে হাত দেওয়া নাজায়েজ। তিনি তো ওই দিন দুপুরের পর মেয়ের চেহারাই দেখেননি। তাহলে মারপিট করল কখন? প্রশ্ন শাহিনুরের।
শাহিনুর আক্তার বলেন, পুলিশ কথা বলতে চেয়ে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর)  আমাদের থানায় ডেকে নেয়। এরপর আমার সাথে কথা বলে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে আমার স্বামীর সাথে কথা বলবে বলে তাকে রেখে দেন। আমাকে পুলিশ বলেছিল পরে আমাকে সব জানাবে। আমার স্বামী মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করার বিষয়ে পুলিশ আমাদের কিছু জানায়নি। তিনি মেয়েকে হত্যা করার কথা মিথ্যে।
শাহিনুর আক্তার বলেন, ঘটনার দিন (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর থেকে পরের দিন (৯ সেপ্টেম্বর) মেয়ের লাশ উদ্ধারের আগ পর্যন্ত আমার স্বামী মেয়ের মুখ দেখেননি। এক ব্যক্তি ওই দিন দুপুরে বাড়িতে এসে তার দোকান থেকে না বলে মেয়ের রুটি নেওয়ার কথা আমাদের জানানোর সময় আমার স্বামী বাড়িতে ছিলেন। তখন তার জোহরের নামাজের সময় হওয়ায় তিনি আমাকে দোকানে পাঠিয়ে নিজে মসজিদে নামাজ পড়াতে চলে যান। এরপর আমি দোকানে গিয়ে সব শুনে মেয়েকে জুতা খুলে দুটো বাড়ি দিয়ে সাথে করে নিয়ে আসি। এরপর বিকেলে ওর বাবা বাড়ি এসে মেয়ের খোঁজ নিতেই আর মাহমুদাকে বাড়ি পাওয়া গেল না। আমরা ভেবেছিলাম মেয়ে পাশে তার বান্ধবী বা আত্মীয়র বাড়িতে গেছে। এরপর ওর বাবা আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাতে এশার নামাজের পর ফিরে মেয়ের খোঁজ করেন। এবারও মেয়েকে না পেয়ে তিনি বাড়ির আশপাশে খোঁজ করেন। রাতে আর মেয়ের সন্ধান পাইনি আমরা। মেয়ে বড় হয়েছে। ধার্মিক পরিবার হিসেবে আমরা কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপ ছিলাম। পরদিন সকালে মেয়েকে খুঁজতে এক আত্মীয়র বাড়িতে যাই। সেখান থেকে ফেরার পথে মেয়ের লাশ মিজানুর চেয়ারম্যানের পুকুরের পানিতে পড়ে থাকার কথা শুনি।
শাহিনুর আক্তার বলেন, মেয়ে মাঝেমধ্যে ওই পুকুরে আমার সাথে গোসলে যেত। ও সাঁতার জানত না। লাশ উদ্ধারের পর শুনেছি মিজান চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় একজন নারী ওইদিন বিকেলে মাহমুদাকে পুকুরে গোসল করতে দেখেছেন। লাশ পেয়ে আমরা প্রথমে ভেবেছি মেয়ে সাঁতার না জানায় হয়ত পানিতে নেমে আর উঠতে পারেনি। পুলিশ মেয়ের লাশ নিয়ে ময়নাতদন্ত করিয়েছে। পরে পুলিশ ও ডাক্তারের মাধ্যমে শুনি আমার মেয়েকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলা হয়েছে। এরপর হাসপাতালের রিপোর্টের ভিত্তিতে ১২ সেপ্টেম্বর থানা পুলিশ আমাকে বাদী করে মামলা নেয়।
মামলার বাদী বলেন, আমার স্বামী পরদিন শনিবার মাছ কেনার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চার দিন নিখোঁজ ছিলেন। তিনি বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বাড়িতে আসলে আমি কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, তার মাথায় অনেক চাপ দিয়েছে। মাথায় কাজ করছিল না। এজন্য তিনি নিরিবিলি সরে ছিলেন। 
শাহিনুর আক্তারের কাছে স্বামীর বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুধবার বিকেলে আমরা দুজনে থানায় গেলে পুলিশ আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেখে দেন। তিনি আর বাড়ি আসেননি। 
এদিকে আয়নুল হক মেয়েকে হত্যা করার বিষয়ে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন এমন খবরে স্থানীয়দের মাঝে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। রোহিতা বাজারের ব্যবসায়ী স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, লাশ উদ্ধারের পর থেকে মেয়ের বাবাকে গ্রেফতারের খবর পর্যন্ত সবকিছু আমাদের কাছে গোলকধাঁধা মনে হচ্ছে। প্রথমে শুনেছি ধর্ষণের পর মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে। এখন শুনছি বাবা-ই খুন করেছে। বিষয়টি অন্য দিকে মোড় দেওয়ার জন্য বাবাকে মেয়ের হত্যাকারী বলা হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি। আমরা বিশ্বাস করি না কোন বাবা মেয়েকে হত্যার পর বিবস্ত্র করে লাশ এভাবে পানিতে ছুঁড়ে মারতে পারে। সুষ্ঠু তদন্ত হলে ঘটনার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
মাহমুদা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আয়নুল হক মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করে বৃহস্পতিবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দীতে বলেছে, রুটি চুরির অভিযোগ পেয়ে সে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েকে মারপিট করেছে। এক পর্যায়ে সে মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ স্থানীয় পুকুর পাড়ে ঝোপঝাড়ের মধ্যে রেখে দেয়। পরে এশার নামাজের পর নিজে পুকুরে লাশ ফেলে দেয়।
লাশের পরনে পায়জামা না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, আয়নুল হক স্বীকার করেছে, সে লাশের পা ধরে পুকুরের পানিতে নিক্ষেপ করার সময় মেয়ের পরনের পায়জামা খুলে তার হাতে থেকে যায়। পরে সেই পায়জামা পুকুরে ফেলে দেয় আয়নুল হক।
চিকিৎসকের দেওয়া ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মাদরাসা ছাত্রী মাহমুদাকে ধর্ষণের কথা উল্লেখ ও সেই অনুযায়ী মামলা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। মামলা থেকে ধর্ষণের ধারা বাদ যাবে।