• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Techogram

"বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ভিনদেশিদের দাদাগিরি মানেনি, নেবেও না": অধ্যাপক মুজিবুর রহমান


FavIcon
শাহরিয়ার সীমান্ত
নিউজ প্রকাশের তারিখ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫৭
ছবির ক্যাপশন: ad728

স্বপ্নভূমি ডেস্ক :  বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ভিনদেশিদের দাদাগিরি মেনে নেয়নি এবং নেবেও না। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনতাই করে নিজেদের স্বাধীনতা দাবি করে, তারা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে না।

৫৫তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে শহীদ ও আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মহানগর দক্ষিণ জামায়াত কার্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, "দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশের জনগণ। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ না করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে কেন আত্মসমর্পণ করেছিল? কেন সেদিন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে সেখানে রাখা হয়নি?"

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি দাবি করেন, ভারত চায়নি এবং চায় না বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। তিনি অভিযোগ করেন, "তারা আমাদের স্বাধীনতা ছিনতাই করে নিয়ে এদেশের সম্পদ লুটপাট করে নিয়েছে। তারা চেয়েছে এবং চায় তাদের সেবাদাস সরকার দ্বারা বাংলাদেশ পরিচালিত হোক।"

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ভিনদেশিদের আধিপত্য মেনে নেয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, "যে কারণে চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতাই হারায়নি বরং আধিপত্যবাদ পরাজিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে লুট হওয়া আমাদের স্বাধীনতা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ফিরিয়ে এনেছে।"

তিনি আরও বলেন, পরাজিত আধিপত্যবাদের সহযোগিতায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ জুলাই যোদ্ধাদের টার্গেট করে হত্যার ছক কষছে। এরই অংশ হিসেবে ওসমান হাদীর ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, "ওসমান হাদিকে গুলি করার অর্থ প্রতিটি জুলাইযোদ্ধার মাথায় গুলি করা।" বিপ্লবী তরুণেরা পরাজিত শক্তির কাছে মাথা নোয়াবে না, বরং আধিপত্যবাদের দোসর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কবর রচনা করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান দাবি করেন, ভারত মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। তিনি বলেন, "তারা বন্ধু বেশে আমাদেরকে শোষণ করেছে। আমাদের ভূ-খণ্ডের সব সম্পদ এমনকি রেললাইনের নাট-বল্টু তারা লুট করে নিয়েছিল। যেটি মেজর জলিল নিজের লেখা বইতে উল্লেখ করে গেছেন।"

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি 'মাথা খারাপ' হয়ে গেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের। বিগত ১৫ বছরে কোনো উন্নয়ন নয়, বরং দুর্নীতি আর লুটপাটের মহোৎসব চলছিল।

সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির বলেন, বিজয় দিবসের আলোচনা থেকে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব কেউ দিচ্ছে না, যার কারণে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস জানতে পারছে না।

তিনি পুনরায় প্রশ্ন তোলেন, পাকিস্তান বাহিনী কেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীর কাছে আত্মসমর্পণ না করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল? এটিকে তিনি ভারতীয়দের চক্রান্ত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "ভারত আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সহযোগিতা করেছে ঠিকই, তবে নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের প্রয়োজনে। আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা তারা ছিনতাই করে নিয়ে আমাদেরকে তাদের কাছে জিম্মি করে রেখেছিল।"

তিনি দাবি করেন, জাতিকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে এদেশের তরুণ প্রজন্ম চব্বিশের বিপ্লব সংগঠিত করেছে, যাদের নেতৃত্বে ছিনতাই হওয়া স্বাধীনতা ফিরে এসেছে। তিনি বিজয়ের এই দিনে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথ গ্রহণের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, মুহাম্মদ শামছুর রহমান, আব্দুস সালাম ও মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।