• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Techogram

বর্ষা এবং জলাবদ্ধতা উপেক্ষা করে পণ্য পাহারা দিচ্ছেন বন্দরের আনসার সদস্যরা


FavIcon
Rifat Ahamed Hemel
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 28, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ad728

বেনাপোল প্রতিনিধি: পণ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সহজতর পথ হওয়ায় বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যাপক ভূমিকা পালণ করে চলেছে।

পরিসংখ্যানে বলা হয় দেশের ৮০ শতাংশ বানিজ্য সম্প্রসারণ এ পথ দিয়ে হয়ে থাকে। ৫ আগষ্ট/২০২৪ দেশে ঊদ্ভূত পরিস্থিথি'র কারণে ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে বানিজ্য সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আমদানি-রপ্তানীর ক্ষেত্রে কয়েকটি পণ্যের উপর সে দেশের সরকার নিষেধাজ্ঞা জারী করে। এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও থেমে নেই অন্যান্য আমদানি-রপ্তানী পণ্য। প্রায় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টি পণ্যবাহী ট্রাক ভারতের পেট্রাপোল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ সকল পণ্য এসে জমা হয় দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে। 

বেনাপোল বন্দরে প্রতি বছর ২২-২৪ লাখ মেট্রিক টন পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়। এসব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্দরে রয়েছে ৩৩টি শেড, ৩টি ওপেন ইয়ার্ড এবং একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। ছোট পণ্য রাখা হয় শেডে, বড়গুলো ওপেন ইয়ার্ডে। কিন্তু এসব অবকাঠামো অধিকাংশই পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মিত হওয়ায় বৃষ্টির সময় পানি জমে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়, চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে,১৪ জুলাই ২০২৫ ইং হতে সারাদিনের ভারী বৃষ্টিপাতে বেনাপোল স্থলবন্দরের শেডগুলোতে (গুদাম) ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।  বৃষ্টির মাত্রা বাড়লে শেডের ভেতরে পানি ঢুকে কোটি কোটি টাকার আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়। বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দরের ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর শেডের চারপাশে পানিতে থৈ থৈ করছে। খোলা আকাশের নিচে রাখা মালামাল পানিতে ভেসে যাচ্ছে।  বন্দরের নিচু জায়গাগুলোতে পানি জমে থাকায় দ্রুত নিষ্কাশন সম্ভব হয়ে ওঠে না।

অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং কার্যকর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কারণে স্থলবন্দর বেনাপোলে বারবার জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে,কোটি কোটি টাকার পণ্য ভাসতে থাকে খোলা ইয়ার্ডে থাকা পণ্য। ফলে,পণ্য পাহারার পাশাপাশি তা রক্ষনাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্ব এসে পড়ে বন্দরের নিরাপত্তা সংস্থার আনসার বাহিনীর উপর। দেখা গেছে নিরাপত্তার দায়িত্ব ছাড়াও  খোলা ইয়ার্ডে পড়ে থাকা কোটি কোটি টাকার পণ্য চুরি-ডাকাতির কবজা থেকে রক্ষা করতে ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পাহারা দিতেছেন আনসার সদস্যরা।এ সব অতিরিক্ত দায়িত্ব পালণ করতে গিয়ে অনেককেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। 

বেনাপোল স্থলবন্দরে নিরাপত্তার কাজে প্লাটুন কমান্ডার(পিসি) ০১ জন,এপিসি-৬ জন এবং ১৫৮ জন আনসার সদস্য রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পেশাগত দায়িত্বের মহানুভবতার যে দৃষ্টান্ত তারা দেখিয়ে থাকেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদ্বার। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কোন কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা হয় না, সীমিত বেতনেই চলতে হয় পরিবার-পরিজনকে নিয়ে।

বন্দরে আনসারদের দায়িত্ব এবং গুরুত্ব সম্পর্কে বন্দর ব্যবহারকারী "নিতা কোম্পানী লিমিটেড" এর অফিস সহকারী মো.আকরাম হোসেন বলেন, "বর্ষার পানিতে বূতমানে বেনাপোল স্থলবন্দর প্রায় তলিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা,এ অবস্থায় খোলামাঠে পড়ে থাকা হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য পানিতে ভিজে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এমতাবস্থায় পণ্য রক্ষনাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তায় আনসার বাহিনী'র জুড়ি নেই। স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে তারা ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকে। এতে করে আমাদের আমদানি-রপ্তানী পণ্যের রক্ষনাবেক্ষণ শতভাগ নিরাপদ থাকে।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক-সাজেদুর রহমান বলেন,"পেশাগত দায়িত্ব পালণে এবং পণ্য নিরাপত্তায় আনসার বাহিনী'র গুরুত্ব অপরিশিম। বন্দরে যে কয়টি চেক পয়েন্ট আছে,প্রতিটি চেকপয়েন্টে আনসারদের জন্য একটি করে ছাউনি'র প্রয়োজন আছে,বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করে তিনি বলেন,আনসারদের পেশাগত দায়িত্ব পালণে প্রশাসনের সহায়তা প্রদান আবশ্যকীয়।

বন্দরের পিসি হেলাল উজ্জামান বলেন,জলাবদ্ধতায় পেশাগত দায়িত্ব পালণ করতে গিয়ে আমাদের কয়েকজন আনসার সদস্য স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছেন। রাতদিন ২৪ ঘন্টা পানির মধ্যে থেকে আমাদের ডিউটি পালণ করতে হয়। আমাদের রুটি-রুজি এখান থেকে আসে,শত বিপদের মধ্যে আমরা নিষ্ঠার সাথে আমাদের দায়িত্ব পালণ করে যাচ্ছি।