লালন, ইনক্লুসিভ রাজনীতি ও আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা
শাহরিয়ার সীমান্ত
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Sep 16, 2025 ইং
হাসান ইলিয়াছ তানিম, ফ্রান্স : বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতার চাবিকাঠি শুধু ভোট নয় বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির মাধ্যমেই রাষ্ট্রগঠন মূল ক্ষমতার উৎস। যে দল বহুত্ববাদী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সম্মান করতে পারে না, তারা ক্ষমতায় গেলেও টেকসই হতে পারে না।
লালন শাহ বাংলার মাটি-মানুষের আত্মা। তাঁর গান একদিকে আধ্যাত্মিক, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িকতার বীজ। ফরিদা পারভীন ছিলেন সেই আত্মারই সুরেলা কণ্ঠস্বর। তিনি চলে গেলেন, অথচ ইসলামপন্থীরা চুপ করে রইল ' এই নীরবতা আসলে তাদের রাজনৈতিক মানসিকতার প্রতিফলন। অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিক শোক জানাল। এতে বোঝা গেল, তারা অন্তত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রাজনীতির অংশ হিসেবে দেখতে চায়। এখানেই বিএনপি ও ইসলামপন্থীদের পার্থক্য।
ইসলামপন্থিদের জন্য বার্তা
যদি সত্যিই রাষ্ট্রক্ষমতার স্বপ্ন দেখেন, তবে বুঝতে হবে 'বাংলাদেশ কেবল মসজিদ আর মাদরাসার দেশ নয়; এ দেশ লালন-হাছন, রবীন্দ্র-নজরুল, বৈচিত্র্যময় লোকসংস্কৃতিরও দেশ। যারা লালনকে অস্বীকার করে, তাদের প্রতি মানুষের আস্থা জন্মাবে না। সংস্কৃতি দমন করার চেষ্টা করলে তা উল্টো আপনাদের জন্য বুমেরাং হবে। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি শিখুন 'সবার জন্য জায়গা রাখুন, তাহলেই দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকা সম্ভব।
বিএনপির বাস্তবতা
হ্যাঁ, বিএনপি ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ইসলামপন্থীদের চেয়ে এগিয়ে গেছে। এতে বোঝা গেল, তারা অন্তত প্রতীকীভাবেও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে স্বীকার করছে। কিন্তু এখনও তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে -" দলটি এখনও দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি আর চাঁদাবাজির দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারেনি। যদি রাজনীতি শুধু ক্ষমতার ভাগাভাগি আর অর্থনৈতিক ফায়দা তোলার খেলা হয়, তবে শোকবার্তা যতই দিক, সাধারণ মানুষের আস্থা মিলবে না।
অশনি সংকেত নাকি সম্ভাবনা?
প্রশ্ন হলো ইসলামপন্থীরা যদি ক্ষমতায় যায়, তবে লালনভক্তদের কী হবে? ইতিহাস ও বর্তমান আচরণ বলে, কট্টর ইসলামপন্থীরা সংগীত, বাউল, লালন-ভাবনা সবকিছুকেই ‘অবৈধ’ মনে করে। তারা নীরব থেকে আসলে স্পষ্ট করেছে 'এই সংস্কৃতির কোনো স্থান তাদের দৃষ্টিতে নেই। ফলে তারা ক্ষমতায় গেলে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার পরিসর সংকুচিত হওয়ার ঝুঁকি প্রবল।
তবে মনে রাখতে হবে - বাংলার লোকসংস্কৃতি নদীর মতো; একে বাঁধা যায় না। মানুষ চাইলেই আবার জেগে উঠবে, তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে তা ক্ষয়িষ্ণু হবে—এটাই প্রকৃত অশনি সংকেত।
বাংলাদেশের মানুষ চায় এমন এক রাজনীতি, যেখানে সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ ও সুশাসন পাশাপাশি চলবে। ইসলামপন্থিদের উচিত সংকীর্ণতা কাটানো, আর বিএনপির উচিত দুর্নীতি থেকে বের হয়ে আসা। না হলে দু’পক্ষেরই ভবিষ্যৎ হবে অনিশ্চিত।
লেখক : হাসান ইলিয়াছ তানিম
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
সদস্য : গ্লোবাল কমিউনিটি, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ফ্রান্স
আপনার মতামত লিখুন :