• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Techogram

ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা: গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা জাগছে


FavIcon
S Hasan
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 2, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ad728

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় চলমান ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষ বন্ধে একটি ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই পরিকল্পনার বিস্তারিত উপস্থাপন করেন ট্রাম্প। এতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উপস্থিত থেকে পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানান।

তবে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এখনো এ প্রস্তাবে সম্মতি দেয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুঁশিয়ার করে বলেন, হামাস প্রস্তাব না মানলে ইসরায়েলের প্রতিটি পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।

পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য

এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো গাজাকে একটি সন্ত্রাসমুক্ত, স্থিতিশীল ও অর্থনৈতিকভাবে টেকসই অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা। পরিকল্পনার মূল দিকনির্দেশনায় রয়েছে—যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময়, মানবিক ত্রাণ সহায়তা, গাজার অবকাঠামোগত পুনর্গঠন, নিরস্ত্রীকরণ, অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন এবং ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ।

২০ দফা পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো:

  • যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি: উভয় পক্ষ পরিকল্পনায় সম্মত হলে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ইসরায়েলি সেনারা সরে যাবে এবং সকল সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

  • বন্দি বিনিময়: হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সকল জীবিত ও মৃত জিম্মি মুক্ত করতে হবে। জিম্মি মুক্তির পর ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ও ১৭০০ জন গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে।

  • সাধারণ ক্ষমা ও নির্বাসনের সুযোগ: যারা অস্ত্র ত্যাগ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান গ্রহণ করবে, তাদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হবে। যারা গাজা ত্যাগ করতে চায়, তাদের নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার সুযোগও দেওয়া হবে।

  • মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন: গাজার পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সহায়তায় বিশাল তহবিল গঠন করা হবে। এর মধ্যে থাকবে পানি, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল, রাস্তা, বেকারি ইত্যাদি মেরামত ও পুনঃনির্মাণ।

  • অন্তর্বর্তীকালীন শাসন: গাজা পরিচালনার জন্য টেকনোক্র্যাটিক ও রাজনীতি-বিমুখ ফিলিস্তিনি কমিটি গঠিত হবে। এটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় পরিচালিত হবে।

  • ‘বোর্ড অব পিস’ গঠন: এই শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তত্ত্বাবধান করবে ‘বোর্ড অব পিস’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যার নেতৃত্বে থাকবেন ট্রাম্প নিজে এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।

  • নিরস্ত্রীকরণ ও সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থা: গাজায় অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ও টানেল ধ্বংস করা হবে। সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে এবং ‘অস্ত্র কেনা ও পুনর্বাসন’ কর্মসূচির আওতায় অস্ত্রধারীদের সমাজে পুনঃস্থাপন করা হবে।

  • ISF গঠন: আন্তর্জাতিক ও আরব অংশীদারদের সহযোগিতায় গাজার নিরাপত্তা রক্ষায় একটি নতুন বাহিনী গঠিত হবে, যা ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে।

  • স্বাধীন ফিলিস্তিনের পথে: পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গাজার পুনর্গঠন ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত হতে পারে।

হামাসের প্রতিক্রিয়া অনিশ্চিত

পরিকল্পনায় হামাসের অংশগ্রহণ অপরিহার্য হলেও তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মতামত দেয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাস যদি এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে, তবুও আন্তর্জাতিকভাবে গাজার সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চলগুলোতে মানবিক কার্যক্রম ও পুনর্গঠন চালিয়ে নেওয়া হবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা

ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা বিশ্বের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই একে যুদ্ধবিরতির বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক অধিকারকে খর্ব করার প্রচেষ্টা হিসেবেও অভিহিত করছেন।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম বিস্তারিত ও কাঠামোবদ্ধ একটি পরিকল্পনা—যা গাজা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন আলোচনার সূচনা করতে পারে।