অভয়নগরে অলিগলিতে কুকুর, ৭৫ দিনে আক্রান্ত ৭০৫ জন
শাহরিয়ার সীমান্ত
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Sep 16, 2025 ইং
অভয়নগর প্রতিনিধি : যশোরের অভয়নগর উপজেলার অধিকাংশ অলিগলি এখন বেওয়ারিশ কুকুরের দখলে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এদের আক্রমণের শিকার শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সি মানুষ। ভয়াবহ মাত্রায় উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ট পথচারীসহ এলাকাবাসী। গত ৭৫ দিনে বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়ালের আক্রমণের শিকার প্রায় ৭০৫ জন রোগী হাসপাতাল থেকে জলাতঙ্গের (র্যাবিস) টিকা নিয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৭৫ দিনে উপজেলা ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকার প্রায় ৭০৫ জন রোগী কুকুর ও বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছে। জুলাই মাসে ২৩৫ জন, আগস্ট মাসে ২২০ জন ও সেপ্টেম্বর মাসের ১৪ তারিখ ১৫০ জন আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে জলাতঙ্গের টিকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১০০ জন রোগী নিজ খরচে কেনা টিকা নিয়েছেন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকার অলিগলিসহ বিভিন্ন সড়কে বেওয়ারিশ কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোথাও সড়কে শুয়ে আছে, আবার কোথাও দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একেকটা দলে ৫-৭টি, কখনো ৭-১০টি কুকুর রয়েছে। আর এইসব কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সি মানুষ।
নওয়াপাড়া পৌরসভার গুয়াখোলা গ্রামের অহিদুজ্জামান বলেন, ‘ফজরের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একদল কুকুরের মধ্য থেকে একটি কুকুর দৌঁড়ে এসে আমার পায়ে কামড় দিয়ে চলে যায়। হাসপাতালে গিয়ে জলাতঙ্গ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছি। বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করা জুরুরী প্রয়োজন।’
নওয়াপাড়া শংকরপাশা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, ‘বাড়ি থেকে স্কুলে আসতে ভয় লাগে, কারণ রাস্তাঘাটে কুকুরের উপদ্রব। বেওয়ারিশ কুকুর নিধন না করলে স্কুলে আসা বন্ধ হতে পারে।’ চলিশিয়া ইউনিয়নের এস এম রায়হান বলেন, ‘বাড়ির পোষা বিড়ালের কামড়ে আক্রান্ত আমার ৬ বছরের শিশু কন্যাকে টিকা দিতে হয়েছে। তবে বেওয়ারিশ কুকুর ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ভয় হচ্ছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলীমুর রাজীব বলেন, ‘নতুন পুরাতন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০ জন রোগীকে জলাতঙ্গের টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রচুর পরিমানে বেওয়ারিশ কুকুর বেড়ে যাওয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ইতোমধ্যে গত আড়াই মাসে প্রায় ৬০৫ জন রোগীকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগী। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় ৩৫০ ভায়াল জলাতঙ্গের টিকা মজুদ রয়েছে।’
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও নওয়াপাড়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ের কারণে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্গের টিকা মজুদ রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উপজেলা পরিষদ, নওয়াপাড়া পৌরসভা ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সমন্বয়ে এলাকা ভিত্ত্বিক সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :